সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা



 

 সূর্যমুখী অসাধারণ  সুন্দর একটি ফুল ঠিকই কিন্তু আপনি কি জানেন  ?এই ফুলের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা শীমের বীজ , কুমড়ার বীজ ,লাউ বীজ এর সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি কিন্তু সূর্যমুখী বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা । সূর্যমুখী বীজ হলো সূর্যমুখী ফুল থেকে প্রাপ্ত পুষ্টিকর   ও স্বাস্থ্যর উপাদান ,স্ন্যাকস হিসেবে বা খাবারের অংশ হিসেবে খাওয়া যায়  । এই বীজে রয়েছে  ভিটামিন ই স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ,ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এছাড়াও সূর্যমুখী বীজ শরীরকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে রোগ প্রতিরোধ বাড়ায় । হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় ।

 সাধারণত সূর্যমুখী বীজকে ছোট মনে করা হয় কিন্তু এই ছোট বিস্ময়গুলো আপনার শরীরের অনেক বড় কাজ করতে পারে । বিশেষ করে ভিটামিন মিনারেল ও এন্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর কারণে এগুলো নিউট্রিশাল পাওয়ারহাউস হিসেবে পরিগণিত । সূর্যমুখী বীজ যার হৃদরোগের ঝুকি কমায় ।   ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করে । এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং এর মধ্যে সেলেনিয়াম প্রোস্টেটের  স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী । সূর্যমুখী বীজ উদ্ভিদ ভিত্তিক প্রোটিনের ভালো উৎস  । যা নিরামিষাশদের জন্য একটি আদর্শ খাদ্য ।

পেজের সূচিপত্র ঃ


সূর্যমুখী বীজের পরিচিতি 
সূর্যমুখী গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Helianthus annuus একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক । এই গাছের বীজ যা সরাসরি খাদ্য হিসেবে বা তেল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয় ।  


র্গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় সূর্যমুখী বীজ ফলিক এসিডের অন্যতম উৎস । এবং সুস্থ গর্ভধারণের জন্য অত্যাবশক। বাদাম এবং বীজ দুটোই ফাইবার  সমৃদ্ধ এবং হজমের জন্য ভালো হওয়ায় খাওয়া  ও খুবই উপকারি । বাদাম  এবং বীজের ওমেগা থ্রি  ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্কের বৃদ্ধি এবং বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় স্নায়ুকে সাহায্য করে । তাই গর্ভবতী আপুরা সন্তানের  সুস্থ বিকাশের জন্য অবশ্যই প্রতিদিন ৫০ গ্রাম সূর্যমুখী বীজ ( সানফ্লাওয়ার সীড ) খাবেন ।

স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য
সূর্যমুখীর বিচিতে রয়েছে  ট্রিপটোফেন নামক একপ্রকার অ্যামিনো এসিড যা শরীরে সেরেটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে  । সেরেটোনিন এমন একটি উপাদান যা মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে ।

স্নায়ুতন্ত্রকে ভালো রাখে 
এর মধ্যাকার ম্যাগনেশিয়াম নার্ভ সেলের অতিরিক্ত ক্যালশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে স্নায়ুতন্ত্রকে সঠিক ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে । এই বীজে রয়েছে ফাইটোস্টেরল যা রক্তে কোলেস্ট্রলের মাত্রা কমায় । 

ত্বকের দাগ দূর করে 

এর মধ্যাকার ফ্যাটি এসিড ত্বকে কোলাজেন ওএলাস্টিন তৈরি করে দাগ দূর করে । এতে আরো েরয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়া প্রপার্টিজ যা জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচায় । 

বয়সের ছাপ দূর করে 
এতে আছে এন্টি-এজিং যা ত্বকে ছাপ পড়তে দেয় না । এর মধ্যাকার ভিটামিন ই  ওবিটা ক্যারোটিন ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত করে ও উজ্জ্বলতা ধরে রাখে। বিটা ক্যারোটিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে ও ভিটামিন েই ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না । 

চুল পড়া রোধ করে
সূর্যমুখীর বীজে হয়েছে ভিটামিন বি ৬ যা মাথার স্কাল্পে অক্সিজেন সাপ্লাই করে চুল পড়া রোধ করে । ও  স্বাস্থ্যউজ্জ্বল নতুন চুল জন্মাতে সাহায্য করে  । এতে আরো রয়েছে কপার যা চুলের স্বাভাবিক রং ধরে রাখে ।

ক্যান্সারের প্রতিরোধক 
এই বীজে আছে উচ্চমানের ফাইটোস্টেরল ও লিগন্যানস যা ক্যান্সার প্রতিরোধক । এসব উপাদান শরীরে ক্যান্সারের কোষ তৈরি হতে দেয় না । 

হাড় শক্তিশালী করে 
হাড়ের সুস্থতার জন্য ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়াম দুটোই খুব জরুরী । সূর্যমুখীর বিচি খনিজ পদার্থের খুব ভালো উৎসব তাই এটি সুস্থ হাড় গঠনে সহায়তা করে  । 

আরো পড়ুন ঃ হৃদয়ের সুস্থতা 
সূর্যমুখী ভিজে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড বিশেষ করে লিনোলেইক এসিড ম্যাগনেসিয়ামএবং ভিটামিন ই হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষিত রাখে ব্লাড সাপ এলএলডি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ।নিয়মিত সীড খেলে সি রিয়েকটিভ প্রোটিনের মাত্রা প্রায় ৩২% কমে যায় । যা প্রদাহ জনিত রোগের ঝুকি হ্রাসে সহায়ক । রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে । প্রতিদিন প্রাকৃতিক ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করলে ৬ মাসের মধ্যে ফাস্টিং ব্লাড সুগারে প্রায় ১০% হ্রাস পাওয়া গেছে । 

ক্যালোরি  ও সোডিয়াম :  সূর্যমুখীর বীজে প্রচুর ক্যালোরি থাকে  । খাবারের গতি ধীর করতে খোসা সহ খেলে ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ  সহজ হয় ।  তবে লেবেল দেখুন খোসায় লবন বেশি থাকলে খেয়াল রাখা জরুরী । 
খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার উপায়
  • সালাদের উপর ছড়িয়ে দিন 
  • স্মুদির সাথে মিশিয়ে 
  • স্ন্যাকস হিসেবে সরাসরি খাওয়া 
  • রুটির ডো তৈরিতে ব্যবহার করা  
যাদের ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে তাদের সূর্যমুখী বীজের পরিমাণ কম রাখা উচিত । এছাড়াও বীজ খাওয়ার আগে এটি পরিষ্কার এবং ভালোভাবে শুকানো নিশ্চিত করুন । 

সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা
সূর্যমুখী বীজের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা এটি খাদ্য হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে  ।এই বীজে উচ্চমানের প্রোটিন স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ বিদ্যামান। যা মানব দেহের জন্য অপরিহার্য। সূর্যমুখী বীজের অন্যতম প্রধান উপকারিতা হলো এটি হার্টের  স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক । সূর্যমুখী বিজে ভিটামিন ই এর উপস্থিতি শরীরের কোষ  গুলোর অক্সিডেটিভ ক্ষতি প্রতিরোধ করে যা বার্ধক্য বিলম্বিত করতে সহায়তা করে । এটি ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য ও ভালো । ভিটামিন বি এবং সেলেনিয়ামের মতো উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবংশরীর থেকে টক্সিন বের করতে সহায়ক । সূর্যমুখী বীজের উচ্চ ফাইবার উপাদান হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবংকোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে । 

বাংলাদেশে চাহিদা 
স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বাংলাদেশে ও সূর্যমুখী বীজের জনপ্রিয়তা বাড়ছে । বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবারের রেসিপিতে সূর্যমুখী বীজ ব্যবহৃত হয় । এছাড়াও এটি স্ন্যাকস হিসেবে সরাসরি খাওয়া হয় ।সূর্যমুখী বীজ যা সাধারণত সানফ্লাওয়ার সিড নামে পরিচিত । সারার বিশ্বে একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় । এটি মুধুমাত্র সুস্বাদু নয় বরং স্বাস্থ্য  উপকারিতা র জন্য ওপরিচিত । বাংলাদেশে সূর্যমুখের বীজের চাহিদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশেষত এর পুষ্টিগুণ এবং বহুমুখী ব্যবহারের কারণে ।

উপসংহার
সূর্যমুখী বীজ একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার যা সঠিক পদ্ধতিতে খাওয়া এবং সংরক্ষণ করলে শরীরের জন্য প্রচুর উপকার বয়ে আনে । বাংলাদেশে এর  জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং এটি শুধু খাদ্য হিসেবে নয় কৃষি খাতেও  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে  । সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা চাষ পদ্ধতি এবং বাজারে  বাজারজাতকরণের বিষয়গুলো বিস্তারিত জানলে এটি থেকে আরো লাভবান হওয়া যায়  । তাই এই বীজের  সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে কৃষক এবং  ভোক্তাতাদের সঠিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি ।

মতামত 
উচ্চ প্রোটিন স্তর সূর্যমুখী বীজ আপনার শক্তির মাত্রা আপ রাখতে সাহায্য করে  ।সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন বি আপনার শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে । সেলেনিয়াম রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং আরো অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে  ।ভিটামিন বি আপনার শরীরকে সারা দিন সক্রিয় রাখতে খাদ্য শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে ।


আমাদের আজকের ব্লগটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অনুগ্রহ করে এটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্লাটফর্ম গুলোতে শেয়ার করুন । আপনার বন্ধুদের ও জানার সুযোগ করে দিন । এছাড়াও আপনি পরবর্তীতে কোন বিষয়ে ব্লগ পড়তে চান তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন । আপনাদের মতামত আমাদের পরবর্তী কনটেন্ট তৈরি করতেও লিখতে অনুপ্রেরণা যোগাবে ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সফটনোরি আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url