অতিরিক্ত চুল পড়া কিসের লক্ষণ
চুল পড়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও যখন এটি মাত্রাতিরক্ত হয়ে যায় তখন তা হতে পারে শরীরের ভেতরের কোন সমস্যার স্পষ্ট ইঙ্গিত । অতিরিক্ত ফুল পড়া দুশ্চিন্তার কারণ । অযত্ন অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার রং ও রাসায়নিকের ব্যবহার ঘন ঘন স্টাইল পরিবর্তন করে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিশেষ করে কেমোথেরাপির পর ফুল ঝরে যেতে পারে ।কখনো অতিরিক্ত চুল পড়া হতে পারে কোন রোগের লক্ষণপ্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পড়া সাধারণ হিসেবে ধরা হলেও যদি চুল পড়া এর থেকে অনেক বেশি হয় এবং মাথার কোনো অংশে টাক পড়ে যেতে শুরু করে তবে এটিকে হালকা ভাবে নিলে চলবে না ।
চুলের রং করার মত কারণেও অনেক সময় চুল পড়তে পারে । রাসায়নিক পদার্থ বারবার করে
চুলে রং করা বা ব্লিচ করা চুল স্ট্রেট করার মতো কারণে চুলের ক্ষতি হতে পারে
। এর ফলে চুল ভেঙ্গে যায় বা পড়ে যায় । আইরন বা গরম ব্লো-ড্রাইং থেকে অতিরিক্ত
তাপ দেওয়ার ফলেওচুলের ক্ষতি হয় । শ্যাম্পুতে অনেক সময় সালফার যুক্ত রাসায়নিক
ব্যবহার করা হয় । কিন্তু এর রাসায়নিকের কারণে মাথার ত্বক থেকে তেল ধুয়ে
যায় । এর ফলে চুল শুকিয়ে যায় চুলের জন্য প্রয়োজনী প্রোটিন ভেঙ্গে যায়
। চুলে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং চুল ভেঙে যায় । সোডিয়াম ক্লোরাইড ও
শ্যাম্পুতে ব্যবহার করা হয় যার কারণে ত্বক শুষ্ক হতে পারে বা চুলকাতে পারে এবং
চুল পড়া বৃদ্ধি করতে পারে ।
পেজের সূচিপত্র ঃ
হরমোন জনিত ভারসাম্যহীনতা
হরমোনের পরিবর্তন বিশেষ করে থাইরয়েড হরমোরে ভারসাম্যহীনতা অতিরিক্ত চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ । হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম উভয় অবস্থাতেই চুল দুর্বল হয়ে যেতে পারে ।
লক্ষণ:
- অতিরিক্ত ক্লান্তি
- ওজন বৃদ্ধি /হ্রাস
- ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
এইলক্ষণ গুলোর সঙ্গে যদি চুল পড়া শুরু হয় তাহলে দেরি না করে থাইরয়েড পরীক্ষা
করানো উচিত ।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
দীর্ঘদিন মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থকলে ,রাত জাগলে ,কম ঘুমাইলে পানি কম পান করলে চুল
পড়া বেড়ে যায় । এই অবস্থাকে বলা হয় ( Telogen Effluvium) যেখানে সময়ের আগেই চুল ঝরে পড়ে যায় । তবে স্ট্রেস
ম্যানেজমেন্ট,যোগব্যায়াম এবং নিয়মিত ঘুমালে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
করতে পারে ।
পুষ্টির ঘাটতি
চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল । বিশেষে
করে ।
- আয়রন
- ভিটামিন ডি
- বায়োটিন
- জিঙ্ক
এগুলোর ঘাটতি হলে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই ভেঙ্গে যায় । তবে পুষ্টিকর
খাদ্য গ্রহণ করলে এবং প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে , তবে অবশ্যই
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম
মহিলাদের একটি সাধারণ হরমোন জনিত সমস্যা যা অতিরিক্ত চুল পড়ার অন্যতম
কারণ । এতে পুরুষ হরমোন ( এন্ড্রোজেন ) বেড়ে যায় যার ফলে চুল পাতলা হয়ে যায়
এবং মুখে অবাঞ্ছিত লোম দেখা দেয় ।
উপসর্গ:
- অনিয়মিত মাসিক
- ব্রণ
- চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
দেহে কোন দীর্ঘমেয়াদি রোগ
কিছু অটোইমিউন যেমন এলোপিসিয়া এরিয়াটা , যেখানে শরীর নিজেই হেয়ার ফলিক
আক্রমণ করে তাতে চুল হঠাৎ করে আঁচড় দিলেই উঠে আসে ।
এছাড়া:
- ডায়াবেটি
- লুপাস
- অ্যানিমিয়া ইত্যাদির সাথে চুলপড়ার যোগ সূত্র রয়েছে
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ঔষধ যেমন:
- ক্যান্সারের কেমোথেরাপি
- উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ
- ডিপ্রেশনের ওষুধ এগুলো চুল পড়ার কারণ হতে পারে
আরো পড়ুনঃ রক্তশূন্যতা
অপষ্টি,কৃমি মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা পরিপাকতন্ত্রে আলসারের দরুন
রক্তক্ষরণের জন্য লৌহের ঘাটতিজনিত কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে
।
এসএলই বা লুপসি: এ রোগে শরীরের নিজস্ব কোষ কলা ক্ষাতিগ্রস্ত হয় । নাক ও
গালে র্যাস ,মুখে ঘা.জ্বর গিরা ব্যাথা ,এবং চুল পড়া এ রোগের লক্ষণ ।
চুল খুব বেশি টান টান করে এমন হেয়ার স্টাইল করা হলে চুলের ফলিকল স্থায়ীভাবে
ক্ষতি হতে পারে । ভেজা অবস্থায় স্টাইল করলে চুল ভেঙে যেতে পারে । এছাড়া
ট্রাইকোটিলোম্যানিয়ার মতো রোগ ও চুল পড়ার কারণ ।এটি এমন একটি
মনস্তাত্ত্বিক রোগ যার ফলে মানুষ বারবার চুল টেনে ধরে । এমন ক্ষেত্রে
প্রায়শই টাক পড়ে যায় । ট্রাইকোটিলোম্যানিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে চুল টানা
বন্ধ করার জন্য এক জন থেরাপিস্ট বা মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারদের শরাণাপন্ন হওয়া
প্রয়োজন ।
হঠাৎ কোন মানসিক চাপ যেমন অস্ত্রোপচার কোনো আঘাত জনিত ঘটনার মধ্য দিয়ে
যাওয়া গুরুতর অসুস্থতা বা উচাচ জ্বরের মতো কারণেও সাময়িক ভাবে
প্রচুর চুল পড়ে যেতে পারে ।
মাথার ত্বকের সমস্যা: মাথার ত্বকে অতিরিক্ত খুশকি ভা অন্য কোন সংক্রমণ ও
চুল পড়ার জন্য দায়ী হতে পারে ।
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন :অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস চুল পড়ার ঝুকি বাড়ায় ।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন ?
যদি আপনার অতিরিক্ত চুল পড়া হঠাৎ চুল পড়া বা টাক পড়ার ভাব বুঝতে পারেন তবে
একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন । কারণ সঠিক সময়ে
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা
সম্ভব ।
শেষ কথা
অতিরিক্ত চুল পড়া এটা কোন রোগ নয় এটি শরীরের অভ্যন্তরী সমস্যার একটি
লক্ষণ তাই একে অবহেলা না করে সময় থাকতেই চুলের যত্ন নেওয়া এবং মূল কারণ
নির্ণয় করায় হবে আপনার বুদ্ধিমানের কাজ ।
মতামত
যেকোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহারের সতর্ক হতে হবে । শ্যাম্পুও হেয়ার জেল
ব্যবহার করলে তা সঠিকভাবে ধুয়ে ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে । এগুলো
দীর্ঘ সময় মাথায় থাকলে তা ত্বকের ছিদ্র গুলো আটকে দিতে পারে যা মাথার
ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে ।
আমাদের আজকের ব্লগটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অনুগ্রহ করে এটি আপনার সোশ্যাল
মিডিয়ায় প্লাটফর্ম গুলোতে শেয়ার করুন । আপনার বন্ধুদের ও জানার সুযোগ করে
দিন । এছাড়াও আপনি পরবর্তীতে কোন বিষয়ে ব্লগ পড়তে চান তা কমেন্টের মাধ্যমে
জানাতে পারেন । আপনাদের মতামত আমাদের পরবর্তী কনটেন্ট তৈরি করতেও লিখতে
অনুপ্রেরণা যোগাবে ।
সফটনোরি আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url