কিডনি রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

 


কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । এটি রক্ত পরিশোধন করে অতিরিক্ত পানি ও বর্জ্য পদার্থ দূরীকরণসহ শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে । সমস্যা হলো বেশিরভাগ মানুষ কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষগুলো বুঝে উঠতে পারে না, যার ফলে রোগটি ধীরে ধীরে জটিল রুপ ধারণ করে । বাংলাদেশে ঘন্টায় পাঁচজনের বেশি মানুষ মারা যান কিডনি বিকল হয়ে আর দুই কোটিরও বেশি মানুষ কোন না কোন ভাবে আক্রান্ত হয়ে আছেন কিডনি রোগে । এমন তথ্য জানাচ্ছে পরিসংখ্যান । আমাদের অনেকেরই জানা নেই কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য । তবে সাধারণত ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট হওয়ার আগে কিডনি বিকল হওয়ার উপসর্গ বোঝা যায় না বলে প্রতিরোধ করা বেশি ভাগ ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না ।

কিডনি সমস্যা শুরুতে তেমন বোঝা না গেলেও কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো  অবহেলা করা উচিত নয়। প্রসাব করার সময় জ্বালাপোড়া ঘন ঘন প্রসাব ,প্রসাব লাল হওয়া, প্রসাবে দুর্গন্ধ, কোমরের দুই পাশে ও তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা ,শরীর মুখ ফোলা  ইত্যাদি লক্ষণ কিডনি রোগের সংকেত  বহন করে । কয়েক মাস বা বছর চিকিৎসার পর ও কিডনি রোগ ভালো না হলে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকলে দীর্ঘস্থায়সেটাকে কিডনি রোগ বলে। ৮০ ভাগ লোকের কিডনি নষ্ট হয় ডায়াবেটিস উচ্চরক্ত চাপ ও নেফাইটিস( কিডনির বিভিন্ন সমস্যা)  এই তিন রোগের কারণে । কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল  সবার পক্ষে এই চিকিৎসা ব্যয় পরিচালনা করা সম্ভব হয় না । তবে সচেতন থাকলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মত দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। 

পেজের সূচিপত্র ঃ






কিডনি রোগের লক্ষণ


পাঁজরের নিচে কোমরের দুই পাশে বা পিঠে গভীর ও স্থায়ী ব্যথা অনুভব করা । অনেক সময় জ্বর বমি বমি ভাব ।প্রসাবের পরিমাণ বেড়ে বা কমে যাওয়া । প্রসাবের রং গাড়ো হওয়া, প্রসাবে রক্ত দেখা দেওয়া ফেনা হওয়া, চোখ মুখ হাত বা পায়ের ফোলা দেখা দেওয়া স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্ত অনুভব করা এবং শক্তিহীন লাগা ।  চুলকানি,  পেশি টান , ক্ষুধামন্দা,এবং মনোযোগের অভাব । কিডনি ঠিকমতো বর্জ্য পরিশোধন না করতে পারলে শরীরের টক্সিন জমে ক্লান্তি দেখা দেয় । শরীরে ইউরিয়া জমে গেলে ত্বকের চুলকানি দেখা দিতে পারে । কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কাজেই কিডনি সমস্যা হলে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে।  ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের সবচেয়ে সাধারণ দুটি কারণ অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও পানির ঘাটতি বিশেষ করে ব্যথার ওষুধ জেনেটিক বা বংশগত সমস্যা প্রসাবের ইনফেকশন বা দীর্ঘমেয়াদী ইউটিআই ।



কিডনি রোগ প্রতিরোধে  যা করবেন

কিডনি রোগের চিকিৎসা রোগের কারণ ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে তবে কিছু সাধারণ উপায় হলো জীবন ধারণ পরিবর্তন করা । পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন । সঠিক খাদ্যাভ্যাস লবণ পটাশিয়াম ও ফসফরাস যুক্ত খাবার কম খান । নিয়মিত ব্যাম করুন একটি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করুন।  রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাথুন  চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন  করুন। নিয়মিত শাকসবজি গ্রহণ করুন যেমন লাউ ,কুমড়া, শসা ,পটল ,ঝিঙে, চিচিঙ্গা ,পালং. এবং ধনেপাতা । আন্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত ফল গ্রহণ করুন যেমন আনারস আঙ্গুর এবং অন্যান্য ফল ।  আদার রসুন এবং পেঁয়াজ কিডনির জন্য খুব উপকারী । লেবু পানি  পান করলে কিডনির পাথর প্রতিরোধ করা যায় । যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন অতিরিক্ত লবণ পটাশিয়াম  খাবাররে জন্য ক্ষতিকর হতে পারে কলা টমেটো আলুর মতো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার । বেশি তেলে ভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন  । কিডনি রোগীরা খাদ্য তালিকা মেনে চললে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। কিডনি রোগীদের অবশ্যই একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ওষুধ ও ডায়েট চার্ট মেনে চলা উচিত ।


কিডনি রোগের চিকিৎসা

  • জীবন ধরা পরিবর্তন: কিডনি বান্ধব খাবার খাওয়া বেশি করে ফল ও সবজি খাওয়া । এবং লবণ ফসফরাসযুক্ত খাবার কমিয়ে দেওয়া  ।
  •  ওষুধ সেবন :  ডায়াবেটিস ও উত্তর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন ।: 
  • ডায়ালাইসিস : যখন কিডনি একেবারে কাজ করে না ( কিডনি ফেইলিউর) তখন রক্ত থেকে বর্জ্য অপসারণে জন্য ডায়ালাইসিস করা হয় ।
  •  কিডনি প্রতিস্থাপন : দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের শেষ পর্যায়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয় । নিয়মিত চেকআপ প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরী ।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

কিডনি রোগের কোন লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত একজন  চিকিৎসকের পরামর্শ নিন কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও সঠিক সিদ্ধান্ত জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। কিডনি রোগ আজকের দিনে এক এক নীরব ঘাতক কিন্তু সচেতন এবং সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব আমাদের উচিত শরীরের ছোট ছোট পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়া  । এবং নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে নিরাপদ রাখা ।


উপসংহার

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ খুবই সাধারণ এবং ধীরে ধীরে পায় বৃদ্ধি পায়  । অতএব প্রাথমিক সনাক্তকরণ ওষুধ এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন এর অগ্রগতি ধীর করে দিতে পারে  । এটি চিকিৎসা না করা কিডনি রোগ সম্পূর্ণ কিডনি ব্যর্থতা হতে পারে । ডায়ালাইসিস বা কিডনি ট্রান্সপ্ল্যানাট  হলো কার্যকর চিকিৎসার বিকল্প। কিডনি রোগ যে কারোরই হতে পারে কিন্তু চিকিৎসা ছাড়া এ ধরনের ক্ষতি আরো খারাপ হয়ে যায় এবং জীবন হুমকিতে পরিণত হয়।






আমাদের আজকের ব্লগটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অনুগ্রহ করে এটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় প্ল্যাটফর্ম গুলোতে শেয়ার করুন । আপনার বন্ধুদের ও জানার সুযোগ করে দিন এছাড়াও আপনারা পরবর্তীতে কোন বিষয়ে ব্লগ পড়তে  চান তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন । আপনাদের মতামত আমাদের পরবর্তী কনটেন্ট তৈরি করতে ও লিখতে অনুপ্রেরণা যোগাবে ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সফটনোরি আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url