রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার লক্ষণ
হিমোগ্লোবিন রক্তের এক প্রকার প্রোটিন যা আমাদের শরীরে অক্সিজেন বহন করে । এটি যদি শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় তাহলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে অনেকেই জানেন না যে, দিনের পর দিন হিমোগ্লোবিন কমে গেলে ও শরীরে কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আজকে আমরা জানবো হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি ধরনের পরিবর্তন বা উপসর্গ দেখা যায় ।প্রাথমিক অবস্থায় তা চিনে নেওয়া যায় ।
হিমোগ্লোবিন কম থাকলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছায় না । ফলে
আপনি খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন । এমনকি ঘুম থেকে উঠার পরও মনে হয় যেন
বিশ্রাম হয়নি । রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে ফ্যাকাসের চামড়া ,ত্বক ও মাড়ি
ফ্যাকাসে দেখায় । ক্লান্তি ;মাথা ব্যথা ,মাথা ঘোরা ,শ্বাসকষ্ট দ্রুত হৃদস্পন্দন
এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে । হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারণে পড়া
মুখ ভেঙ্গে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয় । এই লক্ষণ গুলো সাধারণত
রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) এর ইঙ্গিত দেখা যায় । যেখানে শরীরে
পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারেনা ।
পেজের সূচিপত্রঃ
মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা
কম হিমোগ্লোবিনের একটি সাধারণ লক্ষণ মাথা ঘোরা দাঁড়িয়ে উঠলে হঠাৎ মাথা ঘুরে
যাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলে এটি অ্যানিমিয়া বা হিমোগ্লোবিন স্বল্পতার হতে
পারেন । অল্প কাজ করতে গেলেই চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে যাওয়া হিমোগ্লোবিনের জন্য
হয়ে থাকে । হিমোগ্লোবিনের অভাবে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাই না এর ফলে মাথা
ঘোরা ও মাথা ব্যথা হয় যা একসময় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে ।
মাইগ্রেনের প্রবণতা বাড়তে পারে এবং দীর্ঘ মেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্যর এর বিরূপ
প্রভাব পড়ে । কাজকর্মের মনোযোগ কমে যায় এবং সামান্য কাজ করলেও খুব ক্লান্তি
অনুভূত হয় ।
শ্বাসকষ্ট ও হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি
যেহেতু হিমোগ্লোবিনের কাজ হলো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করা । এর অভাবে
শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয় বিশেষ করে সামান্য শারীরিক কার্যক্রমেও শরীরে
অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে কষ্ট হয় , ফলে শ্বাস-প্রসার দ্রুত হয় স্পন্দন বাড়ে ।
অতিরিক্ত কাজের ফলে হৃদযন্ত্রে চাপ সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে
। সিঁড়ি বেয়ে উঠলে বা অল্প পরিশ্রমে যদি আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাহলে
এটি রক্তে অক্সিজেন কম পৌঁছানোর লক্ষণ - যা হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়
।
ঠোঁট ও ত্বকের রং ফ্যাকাশে হওয়া
ঠোঁট ও মুখের ভেতরে ভ্যাকাশে ও সাদা হয়ে যাওয়া ঠোঁট মাড়ি বা চোখের নিচের
অংশ যদি অস্বাভাবিকভাবে ফ্যাকাসে দেখায় তাহলে তা হিমোগ্লোবিন ঘাটতির অন্যতম
লক্ষণ। হিমোগ্লোবিন রক্তে লোহিত কণিকা বা আরবিসি(RBC) তৈরি করে যা ত্বকে
স্বাভাবিক এবং প্রদান করে । হিমোগ্লোবিন কমে গেলে ত্বক ফ্যাকাশে ও বিবর্ণ হয়ে
যায় । কারণ রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে ত্ব পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছায় না ফলে ত্বক
উজ্জ্বলতা হারায় ।
ঠান্ডার অনুভূতি বেশি হওয়া
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীরের দূরবর্তী অঙ্গগুলোতে যেমন হাত-পায়ে রক্ত
সঞ্চালন ব্যাহত হয় ফলে এগুলো ঠান্ডা লাগে ও মাঝে মাঝে ঝিনঝিনে অনুভব
হয় । যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে । ফলে ঠান্ডা
আবহাওয়া শরীর গরম রাখতে কষ্ট হয় এবং শরীরে শীতের অনুভূতি বেশি হয় । বিশেষ করে
হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় শরীরে উষ্ণতা বজায় রাখতে না পারলে এর ফলে শারীরিক
সমস্যা দেখা দিতে ।
স্মৃতিশক্তির সমস্যা ও ঘুমের সমস্যা
হিমোগ্লোবিনের অভাবে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা যার ফলে
মনোযোগ কমে যায় এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয় রক্তে কর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন না থাকলে
মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতা ও শেখার ক্ষমতা কমে যায় এবং সহজেই ভুলে যাওয়ার
প্রবণতা দেখা দেয় । হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দিলে রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে
এবং ঘুম গভীর হয় না ।অনেক সময় হিমোগ্লোবিন কম থাকার কারণে ঘুমের মধ্য
শ্বাসকষ্ট সমস্যা দেখা দিতে পারে । যা ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে এতে দিনের
বেলায় ক্লান্তি ও অবসাদ বেশি অনুভূত হয়।
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার বিশেষ কারণ সমূহ:
হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে এর মধ্যে সাধারণ
কারণগুলো হলো ঃ
- আয়রন বা লৌহের অভাব : আয়রন বা হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আয়রনের ঘাটতি হলে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন কমে যায় ।
- ভিটামিন বি১২ বা ফলিক এসিডের অভাব : এই দুই ভিটামিন রক্ত তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এগুলোর ঘাটতি হলে শরীর পর্যাপ্ত রক্ত তৈরি করতে পারে না ।
- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ : মহিলাদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে বা গর্ভ অবস্থায় রক্তের পরিমাণ কমে গেলে বড় কোন সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
- হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষনের সমস্যা : সিকেল সেল অ্যানিমিয়া, থ্যালাসেমিয়া , ইত্যাদি জেনেটিক রোগের কারণে শরীর পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে না ।
রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার চিকিৎসা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঃ
হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণের কয়েকটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও চিকিৎসা নেওয়া যেতে
পারে যেমন-
- পুষ্টিকর খাবার : লৌহ যুক্ত খাবার যেমন লাল মাংস ,ডিম ,পালং শাক, কলা, গাজর খাওয়া উচিত এছাড়া , মসুর ডাল বিভিন্ন বীজ যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে ।
- ভিটামিন সি গ্রহণ : ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সাহায্য করে ফলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন পাকা কলা, টমেটো ,স্ট্রবেরি খাওয়া উচিত ।
-
আইরন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ: ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন ট্যাবলেট
বাই ইনজেকশন গ্রহণ করা যায় ।
-
জেনে টিক রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ চিকিৎসা : সিকেল সেল অ্যানিমিয়া বা
থ্যালাসেমিয়ার মত রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ চিকিৎসা এবং নিয়মিত রক্ত
পরিসঞ্চালন প্রয়োজন ।
শেষ কথা
রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হলে তার শরীরের সব অঙ্গ প্রভাব ফেলে দীর্ঘ
মেয়াদে এই ঘাটতি পূরণ না হলে হৃদরোগ কিডনি সমস্যা ও শ্বাস প্রশ্বাসের জটিলতা
দেখা দিতে পারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী
চিকিৎসা নেওয়া যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিকভাবে থাকে এবং শরীর সুস্থ
থাকে । শরীরের ছোট ছোট পরিবর্তন গুলোকে অবহেলা করলে তা বড় রোগের রুপ নিতে পারে
। তাই হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ গুলো চিনে নিয়ে সঠিক সময়ে
ব্যবস্তা নেওয়ায় হচ্ছে স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রথম ধাপ। নিজের প্রতি
সচেতন হন সুস্থ থাকুন।
আমার মতামত
যদি আপনার অপরের উল্লেখিত লক্ষণ গুলোর মধ্যেও একাধিক লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে
দেরি না করে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন । তিনি রক্ত পরীক্ষা করে সঠিক
কারো নির্ণয় করতে পারবেন এবং প্রয়োজনের চিকিৎসা দিতে পারবেন । নিজের
যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন আপনার সুস্থতায় আমাদের কাম্য
আমাদের আজকের ব্লগটির যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অনুগ্রহ করে এটি আপনার
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্লাটফর্ম গুলোতে শেয়ার করুন । আপনার বন্ধুদের ও জানার
সুযোগ করে দিন । এছাড়াও আপনারা পরবর্তীতে কোন বিষয়ে ব্লক পড়তে চান তা
কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন না । আপনাদের মতামত আমাদের পরবর্তী কনটেন্ট তৈরি
করতে ও লিখতে অনুপ্রেরণা যোগাবে ।
সফটনোরি আইটি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url